
নুপা আলম
কোনভাবেই থামছে না মারমেইড কর্তৃপক্ষের বেপরোয়া দখল উৎসব
রামু উপজেলার খুনিয়াপালংয়ের পেঁচারদ্বীপ এলাকার মেরিন ড্রাইভের পশ্চিমে এবং রেজু নদীর পূর্বে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠান। নিজেদের পরিবেশ বান্ধব বা ইকো দাবি করে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্যারাবন ও নদীর ভরাট করে দখল করে রিসোর্ট নির্মাণের অভিযোগ পুরানো। এ ব্যাপারে রয়েছে পরিবেশের মামলাও।
আর এই বেপরোয়া দখলের অভিযোগের মধ্যে রেজু নদীর মোহনায় পানিতে তৈরি করেছে রিসোর্ট। আবার এই রিসোর্টের ছবি নিজ দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানটি ফেসবুক পেইজে আপলোডও করেছে কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে এখন কক্সবাজার জেলা জুড়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা।
ছবিতে দেখা গেছে নদীর জিও ব্যাগের বাইরে পানির উপরই তৈরি করা হয়েছে কয়েকটি রিসোর্ট। আর ওখানে লেখা আছে প্রতিরাত্রি এই রিসোর্টের ভাড়া ১২ হাজার টাকা।
কক্সবাজারের পরিবেশবাদি সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) এর প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন জানান, মারমেইড কর্তৃপক্ষ যেন দেশের আইন-আদালত, প্রশাসন কিছু মানছে না। একের পর এক পরিবেশ ধ্বংস মুলক দখল করে যাচ্ছে। এখন রেজু নদীর উপর রিসোর্ট তৈরি করে নিজেদের বেপরোয়ার প্রমাণ দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তর সহ প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। ব্যবস্থা না নিলে সংগঠনের পক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিমে পেঁচারদ্বীপের আবাহানা ও জাদুঘর এলাকার পশ্চিম পাশে ছিল বিশাল চর ও রেজু নদীর অংশ। কালের পরিক্রমায় রেজু নদীর এ অংশ আস্তে আস্তে ভরাট খালে পরিনত হয়। এ খাল থেকে এক সময় স্থানীয়রা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। এই চর ও ভরাখালে প্রায় ২০ বছর পূর্বে প্যারাবন সৃজন করেছিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নেকম। পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবেও প্যারাবন সৃজন হয়। ওই এলাকায় ঘন প্যারাবন, খালের জোয়ার-ভাটা, জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থলে পরিণত হয়। জায়গাটি সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভূক্ত খাল ও চর শ্রেণীর। এর পশ্চিম পাশে রয়েছে ঝাউবন। কিন্তু এখন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দাবী করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ করে তৈরি হয়েছে মারমেইড নামের প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে প্যারাবনের গাছ ও ঝাউগাছ কেটে তারা বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এব্যাপারে প্রশাসন একাধিকবার অভিযান চালালেও কার্যত কিছুই হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে দখল অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু এসরকারের সময়ও দখল করে যাচ্ছে। গত ৬ মাসে নদীর উপর তৈরি করেছে এসব রিসোর্ট।
বিষয়টি নিয়ে মারমেইড এর মালিক আনিসুর রহমান সোহাগ ও তার ভাই শাহিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তারা দেশের বাইরে রয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার রানা কর্মকার জানান, রিসোর্টের যে ছবি ফেসবুকে দেয়া হয়েছে তা ৫ বছরের পুরানো ছবি। এটা রেজু নদীর কাছে না, এটা সমুদ্রের উপর। বর্তমানে রিসোর্টগুলো আর নেই। তবে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সম্প্রতি এআই ব্যবহার করে একটু উজ্জ্বল করে ছবিগুলো আপলোড করা হয়েছে। এটা নিয়েই মুলত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
অথচ এখনও নদীর উপর এই রিসোর্ট রয়েছে বলে জানিয়েছেন খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মো. আবুল বশর। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী সরকারের শেষ সময়ে রমজান মাসে শেখ রেহেনা সহ তার পরিবারের সদস্যরা মারমেইড বীচ রিসোর্টে আসেন। ওই সময় মারমেইড বীচ রিসোর্টের পশ্চিম পাশে রেজু নদীর মোহনায় এই স্থাপনাটি নির্মাণ করেন কর্তৃপক্ষ। এ সময় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বিশাল বালিয়াড়ি ভরাট করে জিও ব্যাগ দিয়ে দখল স্থায়ী করা হয়। পাশাপাশি বিশাল একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়। কটেজের পশ্চিম পাশের বিশাল ঝাউ বাগান নিধন করায় বিলিন হয়ে গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক জমির উদ্দিন জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া ছবি ও ভিডিও ইতিমধ্যে তাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সুত্র,দৈনিক কক্সবাজার
পাঠকের মতামত